আগস্ট ১৭, ২০১৯
ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত \ নিন্মাঞ্চল প্লাবিত : আশাশুনিতে টানা বর্ষণে হুমকির মুখে অধিকাংশ বেড়ি বাঁধ
আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনিতে কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে উপজেলার কয়েকটি অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে আশাশুনি সদর, প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, শ্রীউলাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাজার হাজার মিটার ওয়াপদা বেড়ি বাঁধ চরমভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অবিরাম বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি ধুয়ে ধুয়ে প্রায় সমস্ত বাঁধগুলি শীর্ণকায় হয়ে পড়েছে। চলতি পূর্ণিমা গোনে বৃষ্টিধারা অব্যাহত থাকলে যেকোনো মুহুর্ত্বে এসব ইউনিয়নের বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া আবাসিক এলাকার পানি সরার পথরুদ্ধ করে গৃহায়ণ করা, অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি ঘের, খালে নেট-পাটা দিয়ে পানি নিষ্কাশনে বাঁধা সৃষ্টি ও কার্লভাটগুলি প্রায় অকেজো হয়ে পড়ায় উপজেলার নিন্মাঞ্চলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার নিন্মাঞ্চলের হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের ও ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই উপজেলা প্রশাসন খালগুলির নেট পাটা অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনে ভূমিকা নেওয়ায় দ্রæত পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের কারণে অতীতে বহুবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। অবিরাম বর্ষণ ও খোলপেটুয়া নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়া গ্রামের বাঁধ গুলিও চরম ক্ষতিগ্রস্ত। গত মাসে বাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হওয়ায় জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল দ্রæত বরাদ্দ দিয়ে প্রাথমিক মেরামতের নির্দেশ দেন। বরাদ্দের টাকা দিয়ে প্রায় দুই চেইন বাঁধ মেরামত করা হলেও কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে বাঁধের মাটি ধুয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে বড় বড় ফাঁটলের সৃষ্টি হয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর কিছু দুরে এমএ হাদির মৎস্য ঘের সংলগ্ন একই বাঁধ ফাঁটল ধরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রæত মেরামতের ব্যবস্থা করা না হলে অতীতে আইলা’র মত দয়ার ঘাটের এ বেড়ি বাঁধ ভেঙে উপজেলা সদরে পানি ঢুকে অফিসগুলি পানিবন্দি হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, আমার ইউনিয়ন তিন দিক থেকে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ বেষ্টিত হওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২ বার এ ইউনিয়নের কোন না কোন জায়গায় ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামের সোহরাব সানার বাড়ি থেকে সাইদ সানার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২০ চেইন বেড়ি বাঁধ, কুড়িকাহনিয়া গ্রামের ঋষিপল্লী থেকে রুইয়ারবিল পর্যন্ত প্রায় ৫০ চেইন, হরিশখালী গ্রামের স্লুইচগেট থেকে আয়ুব আলীর মৎস্যঘের পর্যন্ত প্রায় ৩০ চেইন, কোলা গ্রামের পুরাতন জামে মসজিদ থেকে হিজলিয়া প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত প্রায় ৬০ চেইন রাস্তা দীর্ঘদিন যাবৎ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। প্রতাপনগরের বেশিরভাগ বেড়ি বাঁধ অরক্ষিত হয়ে আছে। এছাড়া গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণে ইউনিয়নের চাকলা, সুভদ্রাকাটি, দীঘলার আইট, রুইয়ারবিল, কুড়িকাহনিয়া, প্রতাপনগর, কল্যাণপুর, নাকনা, সনাতনকাটি ও শীর্ষা গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য কোন স্লুইচগেট না থাকায় হাজার হাজার বিঘা জমির মৎস্য ঘের, ঘরবাড়ি, পুকুর, স্কুল মাদরাসা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় যৎসামান্য ধান চাষ করা হলেও তার বীজতলা নষ্ট হয়েগেছে। আমি এই গ্রামগুলির পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। শ্রীউলা ইউপি সদস্য ওলিউল্লাহ বলেন, শ্রীউলা ইউনিয়নের থানাঘাটা এলাহি বক্সের মৎস্যঘের থেকে রফিক’র মৎস্য ঘের পর্যন্ত প্রায় আড়াই কি:মি: বেড়ি বাঁধ ও থানাঘাটা জামাল মাস্টারের ঘের থেকে হাজরাখালী হয়ে বসির’র মৎস্যঘের পর্যন্ত প্রায় ৪ কি:মি: পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। অবিরাম বর্ষণে গাজীপুর ও নাকতাড়া বিলের ধানের বীজতলা ডুবে আছে। দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নেয়া হলে বীজতলা গুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটন বলেন, বিছট প্রাইমারি স্কুলের সামনে থেকে সাহেব আলীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৮শ মিটার বেড়ি বাঁধ, মনিপুর খেয়াঘাট থেকে বাগালী স্লুইচগেট পর্যন্ত প্রায় ৬শ মিটার বেড়ি বাঁধ, কাকবাসিয়া খেয়াঘাট থেকে চেউটিয়া আব্দুল মালেকের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫শ মিটার ও নয়াখালী জামে মসজিদের সামনে থেকে হাজরাখালী খেয়াঘাট পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ২শ মিটার বেড়ি বাঁধ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। অবিরাম বর্ষণে এলাকার সমস্ত ঘেরসহ ধানের বীজতলা তলিয়ে গেলেও পানি সরতে থাকায় অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম বলেন, খাজরা বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের প্রায় ১শ মিটার বেড়ি বাঁধ ও গদাইপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন প্রায় ১শ মিটার পাউবোর বেড়ি বাঁধ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। অবিরাম বর্ষণে খাজরার বিভিন্ন বিলে শত শত মৎস্যঘের ও ধানের এলাকার বীজতলা ডুবে গেছে। পানি সরবরাহের জন্য স্লুইচ গেট উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতির দিকে। আমাদের বড়দল প্রতিনিধি এসএম শরীফ জানান, বড়দলে প্রায় ৯০ ভাগ এলাকায় নিরঙ্কুশ এক ফসলি ধান চাষ হয়ে থাকে। কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে ইউনিয়নের ফকরাবাদ, বড়দল, বুড়িয়া, বাইনতলা, বামনডাঙ্গা, গোয়ালডাঙ্গা, জামালনগর, ডুমুরপোতা, মাদিয়া, বিলের ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন খালে নেট পাটা ও বাঁধ দিয়ে খালের জলপ্রবাহ সংকীর্ণ করে দেওয়ায় পানি সরবরাহ ধীরগতিতে চলছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র সানার আহŸানে তিতুখালী খালসহ সংশ্লিষ্ট খালের নেট পাটা অপসারণ করা হয়েছে বিধায় পানি নিষ্কাশন গতি পেয়েছে। অপরদিকে কুল্যা ইউনিয়নের বেতনা নদী ভাঙনে গাবতলা ও বুধহাটা ইউনিয়নের বুধহাটা বাজার এলাকা এবং মরিচ্চাপ নদী ভাঙনে কেয়ারগাতি গ্রামে খেয়াঘাট সংলগ্ন নদী ভাঙন চলছে। বর্ষা মৌসুম এলেই এসব এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা থাকে। এছাড়া বুধহাটা, কুল্যা, দরগাহপুরসহ কাদাকাটি ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চলে মাছের ঘের ও ধানের বীজতলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার খালের নেট পাটা ও স্লুইচগেট গুলির পাট অবিলম্বে উন্মুক্ত করে না দিলে বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। প্রত্যেকটি ইউপি চেয়ারম্যান তাদের এলাকাকে সুন্দরভাবে সাজাতে এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নদীভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধান পেতে ঊর্ধ্বতন সকলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানান- অবিরাম বর্ষণে উপজেলার প্রায় সব এলাকার নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন কর্নার থেকে খবর আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। প্লাস্টিকের বস্তা ও অন্যান্য মালামাল দিচ্ছেন এবং বাঁধগুলি মেরামতের জন্য দ্রæত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক আমরাও তাৎক্ষনিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। বর্ষায় ধানের বীজতলার ক্ষয় ক্ষতি কমাতে দ্রæত পানি নিষ্কাশনের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পাপিয়া আক্তার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে খালগুলির নেট পাটা অপসারণ করা শুরু করে দিয়েছেন। অনতিবিলম্বে পানি নিষ্কাশন হবে বলে আশা করছি। 8,505,869 total views, 3,271 views today |
|
|
|